রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আগামী অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ক্যালিব্রেশন এবং যন্ত্রপাতির পরীক্ষা করা হয়েছে। টার্মিনালটি অক্টোবরের মধ্যেই ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হবে।
এ বিষয়ে বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম জানায়, টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে। এরপর এর দায়িত্ব বুঝে নেবে বেবিচক।
গত বছরের ৭ অক্টোবর এ টার্মিনালের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রীর সশরীরে উপস্থিতিতে এ টার্মিনাল থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি এয়ারক্র্যাফট পরীক্ষামূলক চালানো হয়।
দেশের প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এ দুই টার্মিনাল ১ লাখ বর্গমিটার জায়গার ওপর। নতুন তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন বর্তমান দুটি টার্মিনালের দ্বিগুণের বেশি। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এ টার্মিনাল নির্মাণে। অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে মনুষ্য সৃষ্ট অব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হবে এটি।
করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজও চলেছে বিরতিহীনভাবে। বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে জি-৭ রাষ্ট্রগুলো থেকে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। ১৬ মিলিয়ন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই টার্মিনালে লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে প্রাইভেট পার্টনারশিপ হিসেবে বিদেশি একটি দক্ষ সংস্থাকে। কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। সেখানে একটি আধুনিক মনিটরিং রুমও থাকছে। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সব সংস্থার কর্মকর্তারা এই কন্ট্রোল রুম থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন এবং সরেজমিনে মনিটরিং করতে পারবেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে চারটি ট্যাক্সিওয়ে আছে। নতুন করে আরও দুটি হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে যোগ হচ্ছে। রানওয়েতে উড়োজাহাজকে যাতে বেশি সময় থাকতে না হয়, সে জন্য নতুন দুটি ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য দুটি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আরও থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবন। বেবিচকের তথ্যানুযায়ী, থার্ড টার্মিনালে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। থাকবে উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং বে।
বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেকইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেকইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার। আগমনের ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেকইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেকইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মালটিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ১ হাজার ২৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
থার্ড টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ ও উড়ালসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগব্যবস্থা থাকবে। এতে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। থার্ড টার্মিনালে স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। তবে টার্মিনাল ভবনের ভেতরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপিদের সময় কাটানোর জায়গা থাকবে।