ইসরাইলি গণহত্যা নিয়ে প্রতিবেদন করে হুমকির মুখে জাতিসংঘ কর্মকর্তা

গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল—এমনটা বিশ্বাস করার সংগত কারণ আছে। এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজকে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ‘অ্যানাটমি অব আ জেনোসাইড’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। মূলত গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনের স্বরূপ উন্মোচন করা হয়েছিল সেই প্রতিবেদনে। তবে ইসরাইল এই প্রতিবেদন ‘পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান’ করেছে। 

আলবানিজের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এই প্রতিবেদনে কাজ করার কারণে তার ওপর কোনো ধরনের হুমকি এসেছে কি না। 

জবাবে ফ্রান্সেসকা আলবানিজ বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি হুমকি পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমি অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ প্রয়োজন বলে মনে করিনি। তবে যদি চাপের কথা বলেন, এটি আমার প্রতিশ্রুতি বা আমার কাজের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন আনবে না।’ 

ফ্রান্সেসকা আলবানিজ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করছেন ২০২২ সাল থেকে। তিনি নানা ইস্যুতে কাজ করেছেন, তবে কখনোই এমন হুমকির কথা জানাননি। এই প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে তাকে কী ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি। 

এমনকি কারা তাকে এই হুমকি দিয়েছে, সে বিষয়েও খোলাসা করে কিছু বলেননি ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। তবে তিনি বলেছেন, ‘এটি আমার জন্য খুবই কঠিন একটি সময়। এই কাজের শুরু থেকেই আমাকে নানা ধরনে হুমকির মাধ্যমে আক্রমণ করা হয়েছে।’

গাজায় যুদ্ধ থামানোর পাশপাশি বেসামরিক নাগরিকদের আরও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইসরাইলের ওপর যখন আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়ছে তখন গণহত্যা নিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ হলো। 

আরও পড়ুন: জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে গাজা প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় কী পরিবর্তন হবে?

গণহত্যা সুনির্দিষ্ট একটি আইনি পরিভাষা। আলবানিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর কিছু বৈশিষ্ট্য পূরণ হয়েছে। অর্থাৎ গাজায় চালানো গণহত্যামূলক কার্যকলাপ ‘গণহত্যা’ নির্ধারণের মাত্রায় পৌঁছেছে এমনটি বিশ্বাস করার যৌক্তিকতা আছে।

বিবিসি জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞ আলবানিজ তার ‘অ্যানাটমি অব এ জেনোসাইড’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছেন, ইসরাইল ফিলিস্তিনিদেরকে একটি গোটা গোষ্ঠী হিসেবে কিংবা আংশিকভাবে ধ্বংস করার অভিপ্রায় নিয়ে কাজ করেছে। যেটি গণহত্যা কনভেনশনের মূল বৈশিষ্ট্য।

আলবানিজ বিশেষত, জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন (জেনোসাইড কনভেনশন) আইনের তিনটি ধারা ইসরাইল লঙ্ঘন করেছে বলে উল্লেখ করেছেন।

১. গোষ্ঠীর সদস্যদেরকে হত্যা করা

২. শারীরিক ও মানসিকভাবে গোষ্ঠীর সদস্যদের গুরুতর ক্ষতি করা

৩. গোষ্ঠীর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করতে হিসাব-নিকাশ করে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জীবনাচারের ওপর আঘাত হানা।