‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এসব কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যখন একটি স্বৈরাচারী সরকার ছিল, তখন তিনি অন্তত মনে করেছিলেন, এর শেষ দেখে যেতে পারবেন না। কিন্তু জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে, স্বৈরাচারেরও পতন সম্ভব। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ হলেও আমাদের আগামী প্রজন্ম নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে ব্যর্থ হবে না।’
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা যে কিছু করিনি বা করতে চেষ্টা করছি না, এমন নয়। আমরা প্রথম যে পরিবর্তনটা করতে চাইছি, সড়কের দুর্ঘটনা এখন আর আমাদের কাছে কোনো পরিসংখ্যান নয়। আমরা এটিকে এখন আর পরিসংখ্যান হিসেবে দেখছি না। আমরা এটাকে একটি মানবিক বিষয় হিসেবে দেখছি। আমরা দেখছি যে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তি কারও সন্তান, কারও বাবা, কারও ভাই। এর মাধ্যমে একটি সম্ভাবনারও মৃত্যু হয়।’
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান মো. ইয়াসীন।
‘অযোগ্য ২৫ হাজার মানুষের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেয়েছিলেন শাজাহান খান’ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান অযোগ্য ২৫ হাজার মানুষের তালিকা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেয়েছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, শাজাহান খান শেষ হয়ে গেছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। শাজাহান খান এখনো আছেন। তিনি শুধু একটি নাম হিসেবে শাজাহান খান বললেন, যাঁরা অযোগ্য মানুষকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যান। শাজাহান খান বলেছিলেন, ‘রাস্তায় ড্রাইভার যদি গরু আর বলদ চিনে, তাহলেই হবে। মানুষ চেনার কোনো দরকার নাই।’ এটা যদি একজন সড়ক খাতের নেতার বক্তব্য হয়, শেষ পর্যন্ত পরিণতি কী, সেটা তাঁরা অনুমান করতে পারেন।
বাসচাপায় নিহত তাসনিমের পরিবারকে ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ
রাজধানীর বাড্ডায় ৯ অক্টোবর রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসচাপায় নিহত তাসনিম জাহানের পরিবারকে মোট ৬ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এর মধ্যে তাসনিম জাহানের জন্য ক্ষতিপূরণ ৫ লাখ টাকা। ওই ঘটনার সময় আহত হওয়া তার বড় বোন নুসরাত জাহানের চিকিৎসার জন্য এক লাখ টাকা।
আজ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে এই টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় তাসনিম জাহানের বাবা সাইফুল আলমের হাতে। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্যর্থতার দায় স্বীকার করেন।
এর আগে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘৯ অক্টোবর ফেসবুকে দেখি বাড্ডাতে একটি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। সেই দুর্ঘটনায় একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী তাসনিম জাহান মারা যান এবং তার বোন আহত হন। তখনই আমি আমার সচিবকে বলি ওই পরিবারের খোঁজখবর নিতে। এরপর আমি নিহত তাসনিমের বাবার সঙ্গে ফোনে কথা বলি। আমাদের ব্যর্থতা ও অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।’ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, শুধু এটুকুতেই তাঁরা থেমে থাকেননি। তাঁরা দুর্ঘটনায় যুক্ত বাসটির রোড পারমিট বাতিল করেছেন। সেই বাসের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করেছেন। বাসটির ফিটনেস যিনি অনুমোদন করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। চালকের লাইসেন্সও স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় যে মামলা হয়েছে, সেটি চলমান হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক আইনের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিহতের পরিবারকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
ক্ষতিপূরণ হস্তান্তরের আগে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘মৃত্যুর কোনো প্রতিদান হয় না, জীবন অমূল্য। এটা আমরা কেউ দিতে পারব না। কিন্তু আজকে আমরা যে অর্থটা তাসনিম ও নুসরাতের বাবার হাতে তুলে দেব, সেটা কেবল আমাদের ব্যর্থতার দায় স্বীকারের জন্য দেব।’