হাসিমুখের (এইচএসকেএস) এক দশক জয়ন্তী পূর্ণ উপলক্ষে সংস্থাটি গত ১০ই মে “প্ল্যান্টিং ফর বেটার ফিউচার নামে একটি প্রোগ্রাম আয়োজন করেছিলো যা পরিণত হয়েছিলো হাসিমুখের শিশুদের সাথে অতিথিদের হাস্যমুখর মিলনমেলায়।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই সংস্থা কাজ শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিয়ে। রাস্তা থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ৫টি প্রোগাম নিয়মিত পরিচালনা করে আসছে যা এখন পর্যন্ত ১০০,০০০ এরও বেশি মানুষকে সুবিধাপ্রাপ্ত করেছে । হাসিমুখের নিয়মিত প্রোগ্রাম গুলো হলো প্রাথমিক শিক্ষা, পুষ্টিকর খাদ্য, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা, আইটি প্রশিক্ষণ এবং আর্ট ও ক্রাফটিং । বর্তমানে হাসিমুখের শিক্ষামূলক উদ্যোগের অধীনে সেবা নিচ্ছে ৪৩১ জনেরও অধিক শিশু। উল্লেখযোগ্যভাবে, ৪০০ জন শিশু সরাসরি সংগঠনের সহায়তায় মাধ্যমিক শিক্ষা এবং ১৬০০ জন প্রাথমিক শিক্ষা সফলভাবে শেষ করেছে। হাসিমুখে ৬০ জনের ও বেশি ছাত্রছাত্রী সফলভাবে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি সম্পন্ন করেছে। হাসিমুখের এই পথচলার মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার আলো এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশু কিশোর কিশোরীরদের পরিবারের, সমাজের, দেশের জন্য একজন সুদক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা।
এই সংস্থার একদশক পূর্তি উদযাপনে শুধুমাত্র অতীতের অর্জন গুলোই স্মরণ করা নয় বরং ভবিষ্যতে আরো অধিক শিশুকে কিভাবে এই সেবার আওতায় আনা যাবে সেই প্রতিশ্রুতি গ্রহন করা ছিলো সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য।
এই বিশেষ দিনটিকে স্মরনীয় রাখতে হাসিমুখের প্রেসিডেন্ট নুসরাত আখতার দেশব্যাপী ১০০০ টিরও বেশি গাছ লাগানোর ঘোষনা দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের জরুরী বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে এই সময়োপযোগী উদ্যোগটি ই প্রমাণ করে যে হাসিমুখ পরিবেশ রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিকেল ৪ঃ৩০ টায় জাতীয় সংগীত এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং উদ্বোধনী বক্তৃতার মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নাইওকা মার্টিনেজ যাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রেসিডেন্ট নুসরাত আক্তার, আরো উপস্থিত ছিলেন মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, কিযি তাহনিন, নাজিয়াত শাহরিন, সুদেব কুমার, এবং সুশান্ত কুমার শাহা সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে ২৫ টি গাছ বিতরণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার আহ্বান জানান বিশিষ্টরা। সাথে বিশেষ অতিথি সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নাইওকা মার্টিনেজ এর জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে ছিল হাসিমুখ শিশু কিশোরদের হাতে নক্সা করা হারিকেন এবং ক্লের আয়না।এছাড়াও হাসিমুখের কৃতী শিক্ষার্থী মারিয়া এবং নিশিতার তত্ত্বাবধানের ২৫ টিরও বেশি গ্রীন ক্যানভাস পেইন্টিং করা হয় যা আমাদের অতিথিদের মাঝে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়।
হাসিমুখের এক দশক জয়ন্তী উৎযাপন উপলক্ষে সকল অতিথিদের সাথে হাসিমুখের ছাত্রছাত্রীরা একত্রিত হয়ে কেক কেটেছিল। এরই সাথে ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ক্রিম বান এবং আড়ংয়ের চকো-দুধ বিতরণ যেন উদযাপনের আনন্দ বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে।
এই সফলতার অংশীদার হিসেবে হাসিমুখের শিক্ষকদের মাঝে প্রশংসার সনদ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষাই সচেতনতামূলক নৃত্য প্রদর্শন করে হাসিমুখের ক্ষুদে নৃত্যশিল্পীরা এবং দ্বিতীয় নৃত্য পরিবেশনাটি পরিচালিত হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে।
উৎসবের সমাপ্তিতে হাসিমুখের প্রেসিডেন্ট নুসরাত আক্তার এবং প্রধান অতিথি মার্টিনেজ প্রতীকী হিসেবে বিসিএসআইআর চত্বরে তিনটি বৃক্ষ রোপণ করেন যা ১০০০ গাছ রোপণের প্রথম সোপান । পরিশেষে,উপস্থিত সকলে হাসিমুখ সমাজ কল্যাণ সংস্থার দশম-বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামনে আরো এগিয়ে যাওয়া আহবান জানান।