বুয়েট এ রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এই আদেশ দিয়েছেন।

বুয়েটে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়।

২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেওয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা নিয়ে বুয়েটের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন আজ রিটটি করেন।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে কালো আইন বলছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বুয়েট ক্যাম্পাসে অবিলম্বে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতি চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

আজ রোববার দুপুরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ছাত্রলীগের নেতারা এই আহ্বান জানান।

‘মৌলবাদী গোষ্ঠীর কালো ছায়া থেকে মুক্ত করে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির দাবিতে এবং বুয়েট কর্তৃক গৃহীত সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পরিপন্থী শিক্ষাবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে’ এই সমাবেশ ডাকে ছাত্রলীগ।

সমাবেশে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলায় কি সমাধান। বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কালাকানুন বাতিল করতে হবে। আইন অনুসারে গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশ থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দেন ছাত্রলীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আলটিমেটাম দিচ্ছি, বুয়েটে ছাত্র সংসদের নির্বাচন দিতে হবে। ইমতিয়াজ বাপ্পীকে (হলে আসন বাতিল হওয়া ছাত্র) সসম্মানে হলে বরণ করে নিতে হবে।’ তিনি বুয়েটে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশের প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা পরীক্ষা বর্জন করে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন।

বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। এরপরও গত বুধবার মধ্যরাতের পর ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম চালান।

ছাত্রলীগের সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, তিনি ওই দিন তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে বুয়েটের ভেতরে অবস্থিত শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়েছিলেন। বৃষ্টির কারণে তখন ক্যাফেটেরিয়াতে যান। বুয়েট ক্যাম্পাসে ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে প্রবেশ করতে হবে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন ছাত্রলীগ সভাপতি।

সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, বুয়েট ক্যাম্পাসে আবরারের মৃত্যু তাঁদের অন্তরকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তবে বুয়েট ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহ্‌রীর, জেএমবি, ছাত্রশিবির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের কারিগর হবে, এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, গুটিকয় ছদ্ম প্রতারক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে তাঁদের আন্দোলনে নামিয়েছে।

সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ। তিনি বলেন, মতপ্রকাশের সুযোগ সবার রয়েছে। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া কোনো অপরাধ নয়। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করবে কি করবে না, তার সিদ্ধান্ত কোনো চক্রান্তকারীদের ছেড়ে দেওয়া যায় না।

শেখ ওয়ালি আসিফ আরও বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ অতীতেও পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হলের আসন বাতিল হওয়া ইমতিয়াজ হোসেন সমাবেশে গিয়ে বক্তব্য দেন।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির বলেন, জঙ্গিবাদের অভিযোগে অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে বুয়েট ক্যাম্পাসে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে। সনি ও দ্বীপের কথা বুয়েট প্রশাসন ভুলে গিয়েছে। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের কথা বলে হিজবুত তাহ্‌রীর ও শিবিরকে বুয়েট প্রশাসন উৎসাহিত করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজীবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ড প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন। বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাস ছেড়ে যান।