‘আব্বু আমাকে মাফ করে দিয়েন’

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি ফরিদপুরের তারেকুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে চলছে আহাজারি। পণবন্দি ২৩ নাবিকের মধ্যে বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার তারেকুলও রয়েছেন।

সন্তানকে ফিরে পেতে তারেকুলের বাবা মা কান্নাকাটি করছেন আল্লাহর কাছে। বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তারেকুলের বাবা মায়ের সাথে।

বাড়িতে প্রবেশের জন্য দরজার সামনে দাঁড়াতে দেখা গেল- তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন কোরআন তেলাওয়াত করছেন। তারিকুলের মা হাসিনা বেগমের কান্না থামছেই না। ছেলের ছবি দেখে কান্না করছেন আর তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ করছেন।

তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ম্যাসেজের মাধ্যমে কথা হতো তারেকুলের সাথে। হঠাত করেই ম্যাসেজ দেয়, ‘আব্বু আমাকে মাফ করে দিয়েন’। এই ম্যাসেজ পাওয়ার পর আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। এরপর বড় ছেলের কাছে জানতে পারি তারেকুলের জাহাজ জলদস্যুরা আটকে ফেলেছে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। আজ সকালে একটা ম্যাসেজ দিয়েছে একটি ক্যানেলের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। আর কোনো যোগাযোগ করতে পারি নাই।

তিনি আরো বলেন, জাহাজ কোম্পানীর সাথে কথা হয়েছে, তারা এখনও কিছু বলতে পারছেনা। সুস্থভাবে ছেলেকে ফিরে পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

তারিকুলের মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, সাত বছর বয়স থেকে কখনো নামাজ-রোজা কামাই করেনি তারেক।

বাড়িতে ভিড় করছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। তাদের একটাই আকুতি, যেকোনো মূল্যে তারা তাদের প্রিয় তারেকুলকে ফেরত চান।

অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো. তারেকুল ইসলাম মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরিতে যোগ দেন।

সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া গোল্ডেন হক নামে বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারেকুল। তারেকুলের এক বছর এক মাস বয়সী একটি মেয়ে আছে। বর্তমানে তারেকুলের স্ত্রী ও সন্তান তার বাবার বাড়িতে রয়েছে।