ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হতেই দেশটির চার রাজ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধী শাসিত তিন রাজ্য সিএএ চালু করবে না বলে জানিয়েছে। আসামে বিক্ষোভ সবচেয়ে তীব্র। আসামে ১৬টি ছোট দল ও কংগ্রেস মিলে ইউনাইটেড অপজিশন ফোরাম তৈরি করেছে।
তারা মঙ্গলবার এক দিনের ধর্মঘট ডেকেছিল। এ ছাড়া ছাত্রসংগঠন আসু জানিয়ে দিয়েছে, তারা সিএএ মানবে না। আসু ও ৩০টি অরাজনৈতিক সংগঠন মিলে সিএএর কপি পুড়িয়েছে।
অসমিয়া প্রতিদিনের দিল্লির ব্যুরো চিফ আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, আসুসহ অন্য সংস্থা ও আদিবাসী সংগঠনগুলো সিএএর বিরোধিতা করছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে। আর আসু ও আদিবাসী সংগঠনগুলোর বক্তব্য, তারা অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে লড়েছে। এই আইনে অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তাই তারা বিরেোধিতা করছে।
এ ছাড়া রাজ্য সরকার কড়া হাতে এই বিক্ষোভের মোকাবেলা করবে বলে জানিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নোটিশ দিয়ে বলেছে, কেন তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। আসাম হাইকোর্টের একটি রায়কে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা হুমকি দিয়েছেন, দরকার হলে ওই রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হবে।
কলকাতায় মিছিল
মঙ্গলবার কলকাতায় মৌলালির মোড় থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত সিএএবিরোধী মিছিল বের হয়। সেখানে জনা ষাটেক বিক্ষোভকারী ছিলেন।
তারা জানিয়েছেন, আগামী দিনে বিক্ষোভ আরো তীব্র হবে।
মঙ্গলবারের মিছিলে ছাত্র-যুবাদেরই বেশি দেখা গেছে। বিক্ষোভে যোগ দেওয়া মানুষের মুখে শোনা গেছে একটা আশঙ্কার কথা। সেটা হলো, সিএএর পর এবার এনআরসি চালু করা হতে পারে।
দিল্লিতে সতর্কতা
দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএএবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশের আশঙ্কা, জওয়াহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হতে পারে। তাই তারা বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তা ছাড়া চার বছর আগে শাহিনবাগে সিএএ ও এনআরসি বিরোধী বিশাল বিক্ষোভ হয়েছিল। তার দিকেও নজর রাখা হয়েছে।
চেন্নাইয়ে বিক্ষোভ
চেন্নাইয়েও সিএএবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে মূলত ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এর মধ্যে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনও ছিল।
তিন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তামিলনাড়ুর স্ট্যালিন এবং কেরালার পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, তাঁরা তাঁদের রাজ্যে সিএএ রূপায়ণ করবেন না।
এই আইন রূপায়ণ না করার কথা বলে মমতা একটি জনসভায় বলেছেন, ‘আপনারা নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করবেন না। করলে উল্টো নাগরিকত্ব চলে যাবে। আপনাকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলবে। আপনার সম্পত্তি কেড়ে নেবে। ওই ফাঁদে খবরদার পা দেবেন না!’
এরপর বিজেপি অভিযোগ করেছে, মমতা মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।
স্ট্যালিন বলেছেন, তামিলনাড়ুতে কোনোভাবেই সিএএ রূপায়ণ করতে দেওয়া হবে না। কারণ মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এই আইন সংবিধানবিরোধী।
তবে এই আইনের রূপায়ণে রাজ্যের খুব একটা ভূমিকা নেই। মানুষ অনলাইনে পোর্টালে আবেদন জানাতে পারবে। তারপর তাদের আবেদন বিবেচনা করবেন ভারত সরকারের কর্মকর্তারা।