সারা দিন রোজা রাখার পর দিনশেষে পছন্দের খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে সবাই। ইফতার ঘিরে দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে খাদ্য-ঐতিহ্য। তার মধ্যে বরাবরই খ্যাতি ও আলোচনার শীর্ষে পুরান ঢাকার ইফতারসামগ্রী। রমজানের প্রথম দিন থেকেই ঢাকার অনেক রোজাদার তাই ছোটে চকবাজারে।
তবে সময়ের অভাব, দূরত্ব আর যানজটের কারণে ইচ্ছা থাকলেও ঢাকার উত্তরাংশের অনেকে সেমুখো হতে পারে না। তাদের জন্য কয়েক বছর ধরেই আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) ‘পুরান ঢাকার ইফতার বাজার’। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিচ্ছন্ন ও মনোরম পরিবেশে এবার অষ্টমবারের মতো বসেছে এ বাজার।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় ফিতা কেটে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবারের পুরান ঢাকার ইফতারির বাজার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসিম উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এম এম জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বসুন্ধরা আবাসিক, উত্তরা, গুলশান, বারিধারাসহ আশপাশের এলাকার মানুষ চাইলেও সাধারণত যানজটের কারণে পুরান ঢাকা থেকে ইফতারি এনে খেতে পারে না। তাদের কথা মাথায় নিয়েই ২০১৫ সাল থেকে আইসিসিবিতে পুরান ঢাকার বাহারি ইফতারির বাজার বসছে। বাড়তি সময় ব্যয় বা যানজটের ঝামেলা ছাড়া এসব এলাকার মানুষ পুরান ঢাকার ইফতারি আইসিসিবিতে পেয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার ডেপুটি ম্যানেজার (ব্র্যান্ড) মেহেদী হাসান মোল্লা কালের কণ্ঠকে জানান, আইসিসিবি এবার অষ্টমবারের মতো আয়োজন করেছে পুরান ঢাকার ইফতারির বাজারের। ঢাকাই ঐতিহ্যের স্বাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নতুন ঢাকার ভোজনরসিকদের পরিচিত করাতেই আইসিসিবির এ উদ্যোগ। এখানে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও ধুলাবালিমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুরান ঢাকার ইফতারি পাওয়া যাচ্ছে। দামও মোটামুটি নাগালের ভেতর। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ইফতারের সময় পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে ২৫ রমজান পর্যন্ত।
প্রথম দিন বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর দ্রুত ক্রেতাসমাগম বাড়তে থাকে। বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বিক্রেতারা বেশ ব্যস্ত ছিলেন। আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্ট, মাস্টারশেফ সুবরাত আলী, জসিম উদ্দিন ক্যাটারিং, প্রিমিয়ার ক্যাটারিং, রিভার আইল্যান্ড ফুড, ফুডুগুডু, রসুই ঘর, নাজিলাস কিচেন অ্যান্ড ক্যাটারিং, হাবিবি ফল বাজার, হ্যাপি লাউঞ্জসহ ৩২টি স্টল রয়েছে এবার। আইসিসিবির ৫ নম্বর হল পুষ্পাঞ্জলিতে নিরিবিলি পরিবেশে এক ছাদের নিচে ক্রেতারা পাবে নানা রকম কাবাব, ডিমের চপ, হোল মাটন রোস্ট, মাটন লেগ রোস্ট, হোল চিকেন মুসাল্লাম, চিকেন রোস্ট, মাটন কাচ্চি, বিফ তেহারি, বিফ পাক্কি ছাড়াও বিভিন্ন রকম সবজির পদ, মিষ্টান্ন ও শরবত। আছে আনারস, তরমুজ, বাঙ্গি, আঙুর, পেঁপে, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফল, ফলের রস আর সালাদের আয়োজন।
প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে আইসিসিবি হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে। মোগলাই খাবারের জন্য খ্যাতি রয়েছে এর। ৩৩ পদের ইফতারির আয়োজন রয়েছে তাদের। বিরিয়ানির মধ্যে রয়েছে মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি (বাসমতী ও চিনিগুঁড়া), মোরগ পোলাও, বিফ তেহারি ও বিফ পাক্কি। চিকেন রোস্ট বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ১৭০ টাকা দরে। রোস্টের মধ্যে আরো রয়েছে হোল চিকেন মুসাল্লাম, মাটন লেগ রোস্ট ও হোল মাটন রোস্ট। রয়েছে আট পদের কাবাব ও বিফ কালা ভুনা, বিফ গার্লিক ও বিফ হান্ডি কাবাব। এ ছাড়া আছে ঢাকাই ইফতারির অতি পরিচিত পদ ছোলা ভুনা, পিঁয়াজু, বেগুনি, ডিমের চপ, আলুর চপ, লুচি-পরোটা, হালিম ও কয়েক রকমের জিলাপি। হেরিটেজ রেস্টুরেন্টে গরুর হালিম পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০, ৫০০ ও ৭০০ টাকা দরে। খাসির হালিমের বিভিন্ন সাইজের দাম ৪৫০, ৬০০ ও ৮০০ টাকা।
প্রতিবছরের রোজায় আইসিসিবির ইফতারি বাজারে অংশ নেয় জসিম উদ্দিন ক্যাটারিং। কথা হলো এর প্রধান মো. জসিম উদ্দিন বাবুর্চির ছেলে সোহেল রানার সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রান্নার সঙ্গে যুক্ত এর স্বত্বাধিকারী মো. জসিম উদ্দিন বাবুর্চি। এখানকার ইফতারি বাজারে প্রতিবারই অংশ নেওয়ায় আগত ক্রেতাদের অনেকেই তাদের খাবারের স্বাদের সঙ্গে পূর্বপরিচিত। তাই বেচাবিক্রিও হয় ভালো। সোহেল রানা জানান, আজ থেকে তাদের ক্যাটারিংয়ে মাটন কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, চিকেন ফুল রোস্ট, চিকেন রোস্ট, বিফ কালা ভুনা, বিফ হান্ডি কাবাব, বিফ তেহারি, মাটন লেগ রোস্ট পাওয়া যাবে।