আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্যাশন ডিজাইনার চমন চৌধুরী এই দুই মেজাজে বেঁধেছেন এক মার্জিত সন্ধ্যায়। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় ‘চমন চৌধুরীর ক্রুজ লাইন 2024’ ফ্যাশন শো।
অনেক ফ্যাশন শো আছে। তবে এই শোটি অনেক কারণেই বিশেষ ছিল। প্রথমত, আশ্চর্যজনক পাটের পোশাকের উৎকর্ষ। পাটের তুষ (বাংলায় বস্তা) শুধুমাত্র গৃহস্থালির জন্য চাল বহন করার জন্য ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সেগুলোকে রাজধানীর জমকালো ফ্যাশন শো-এর অংশ করার প্রচেষ্টা অস্বাভাবিক নয়। দিনে দিনে এই ডিজাইনার পাটকে আরামদায়ক পরিধানে পরিবর্তিত করেছেন।
‘চমন চৌধুরীর ক্রুজ লাইন 2024’ ফ্যাশন শো-এর অন্যান্য বিশেষত্বের মধ্যে ছিল ফ্যাশন আইকন বিবি রাসেল, প্রখ্যাত অভিনেত্রী সারা যাকের এবং দেশের বিজ্ঞাপন ব্যক্তিত্ব ও নারী উদ্যোক্তা গীতিকার সাফিয়া চৌধুরীর উপস্থিতি। উপস্থিত আরো ছিলেন হারনেট টিভি এর প্রতিষ্ঠিতা আলিশা প্রাধান এবং মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিলো হারনেট টিভি।
শুধু তাই নয়, তিথি দম্পতি হিসেবে প্রথমবারের মতো র্যাম্পের হেঁটে চমক সৃষ্টি করেছেন বিজেএমইএ চেয়ারম্যান ফারুক হাসান ও জায়ান্ট গ্রুপের পরিচালক শারমিন হাসান।
অনুষ্ঠানের শেষ চমক হিসেবে র্যাম্পে জ্বলে উঠলেন বর্তমান ছোট পর্দার সুপারস্টার অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী।
তরুণ প্রজন্মের প্রতিভাবান শিল্পী স্বপ্নীল সজীবের সংগীতায়োজন এবং তার কণ্ঠে গাওয়া কালজয়ী আধুনিক বাংলা গানের মধ্য দিয়ে ফ্যাশন শোটি অন্যরকম হয়ে ওঠে। ঢাকা থেকে মার্শাল এবং মুম্বাই থেকে কেডি নতুন করে মিউজিক করেছেন। সামিউল ইসলাম পোলকের বাংলা ও ইংরেজি কবিতা আবৃত্তি সেই আবেশ পূর্ণ করে। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সামিউল ইসলাম পোলক ও বড়িশা হক।
অনুষ্ঠানটিকে আরও বিনোদনমূলক করতে সিলেটের মণিপুরি থেকে নৃত্যশিল্পীরা এসেছেন। ভারতের কেরালা থেকে কথাকলি নৃত্যশিল্পীরাও এসেছিলেন।
গীতিয়ারা সাফিয়া চৌধুরী, বিবি রাসেল, সারা যাকের, ফারুক হাসান, শারমিন হাসান তিথি, মেহজাবীন চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শুভ্রদেব, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগ, স্বপ্নিল সজীব, অন্তঃসত্ত্বা শিল্পী আশিকুল্লাহ, বরিশাল প্রমুখ। কৃতাংশু পাল ও জুয়েলারি ডিজাইনার ড.লুসি রিফাত।
চমন তিনটি পর্যায়ের মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ ফ্যাশন প্যারেড উপস্থাপন করেন। তার প্রথম সংকেত ছিল ‘অ্যাপারেশন’। সেখানে তিনি লেহেঙ্গা থেকে শুরু করে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ব্লেজার এবং বিভিন্ন ধরনের ফিউশন পরিধান সবকিছুই উপস্থাপন করেন।
মধ্য কিউয়ের নাম ছিল ‘পাসিং’। যুবতীর সহজ এবং বিজি লুক এতে ফুটে উঠেছে। ক্যাজুয়াল পোশাকের সংগ্রহ ছিল সেখানে।
শেষ কিউয়ের যাত্রী’ এবং শেষ কিউয়ের নাম ছিল ‘যাত্রী’। এটি একটি মহিলার সৌন্দর্য উদযাপন করার সংকেত। মূলত, এই কিউতে রাতের পার্টিতে আলো দেওয়ার জন্য উপযুক্ত পোশাক ছিল।
যারা চমনকে চেনেন, তারা জানেন যে এই মেধাবী ডিজাইনার বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ, সোনালি আঁশ বিশিষ্ট পাটকে ব্যবহার করে পোশাক ডিজাইন করেন।
পাটকে এতটাই মডিফাই করেছেন যে, এবার তার সংগ্রহ দেখে বোঝা যাচ্ছে না এটা পাট না তুলা নাকি সিল্কের!
এবার তিনি খাঁটি পাটের কাপড়ের সঙ্গে তার ডিজাইনে জামদানি, পাটের সঙ্গে কাতান যোগ করেছেন। শাড়ি ব্লাউজের কাটিং প্যাটার্নের ভিন্নতা, যা ফিউশন পরিধানের স্বাদ দেয়। পাট দিয়ে ছেলেদের জন্য ব্লেজার ও হুডির মতো ট্রেন্ডি পোশাক তৈরি করেছেন দিব্যা।
চমন চৌধুরী বলেন, ‘আসন্ন ঈদ ও চলমান বসন্ত মৌসুমের কথা চিন্তা করেই এবারের একক ফ্যাশন শো করছি। আশা করি আমার নতুন কালেকশন সবার মন জয় করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘নকশায় বৈচিত্র্য আনা সবসময়ই খুব কঠিন। কারণ, আমি শুধু পাটের প্রচার করতে চাই। তারপরও নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি নতুনত্ব আনার। এবার অনেক নতুন ডিজাইন করেছি। আমি এই শোতে তাদের কিছু উপস্থাপন করেছি। অনেকেই আমাকে আলাদা করে বলেছেন যে তারা আমার ডিজাইন পছন্দ করেন। আরো অনেক নতুন কালেকশন আসবে। তাদের সঙ্গে একক শো করব। আশা করছি, তারাও সবার মন জয় করবে।