ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আপত্তি উপেক্ষা করে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজের সাথে বৈঠক করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এর ফলে নেতানিয়াহুর প্রতি মার্কিন নেতৃত্বের বৈরীভাব প্রকটভাবে ফুটে ওঠেছে। মার্কিন প্রশাসন গাজায় আরো বেশি মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য চেষ্টা করার প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।
উল্লেখ্য, বেনি গ্যান্টজকে বিবেচনা করা হয় নেতানিয়াহুর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। ডেমোক্র্যাট প্রশাসন মনে করে, নেতানিয়াহুর আপত্তি উপেক্ষা করে এই ইসরাইলি নেতার সাথে কমলা হ্যারিসের বৈঠক করাটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।+
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কমলা হ্যারিস এবং মার্কিন প্রশাসনের অন্য সিনিয়র কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমান হারে স্পষ্টভাবে গাজায় মৃত্যু বাড়তে থাকায়, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের ব্যাপারে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
গ্যান্টজের সাথে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে হ্যারিস বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এবং আমি শুরু থেকেই একই নীতিতে রয়েছি। ইসরাইলের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার আছে। তবে খুব বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক এবং নিরীহ লোক নিহত হয়েছে। আমাদের সেখানে আরো বেশি সাহায্য পাঠানো দরকার। আমাদের পণবন্দীদের বের করে আনা দরকার। এবং এটাই আমাদের নীতি হিসেবে বহাল থাকবে।
বৈঠকের পর ওয়াইট হাউস থেকে প্রকাশ করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট পণবন্দীদের নিয়ে চুক্তির উপর জোর দেন, এবং “আলোচনায় ইসরাইলের গঠনমূলক” ভুমিকাকে স্বাগত জানান।’
কামালা হ্যারিস প্রস্তাবিত চুক্তিকে মেনে নেয়ার জন্য হামাসের প্রতি আহবান জানান, যার মাধ্যমে পণবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ছয় সপ্তাহ যুদ্ধবিরতি এবং সারা গাজায় মানবিক সহায়তা ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বেনি গ্যান্টজ রাফায় কোন সামরিক অভিযান নিয়ে ভাবার আগে সেখানে একটি গ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত মানবিক পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলাপ করেন।’
ওয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে এবং উত্তর গাজায় একটি ত্রাণ বিতরণ কনভয় ঘিরে মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গাজায় মানবিক সাহায্যর সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এবং তার নিরাপদ বিতরন নিশ্চিত করার জন্য ইসরাইলকে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট আহবান জানান।
অনেক ব্যাপারেই নেতানিয়াহুর মতো একই ধরনের কট্টর মনোভাব পোষণ করেন গ্যান্টজ। তবে তিনি কিছু ব্যাপারে আপস করতে আগ্রহী বলে বেশ খোলামেলাভাবেই জানিয়েছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে গাজায় আরো বেশি ত্রাণ সহায়তা পাঠানো।
ফলে কমলা হ্যারিস-গ্যান্টজ বৈঠকটি ইসরাইলের প্রতি মার্কিন নীতির প্রতিফলন হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে।
উল্লেখ্য, নেতানিয়াহুর জাতীয়তাবাদী লিকুদ পার্টি জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে বৈঠক করার ব্যাপারে গ্যান্টজ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নেননি। তার ওয়াশিংটন সফরের ব্যাপারে নেতানিয়াহু কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। আর এতে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার নেতৃত্বের মধ্যে ফাটল বিস্তৃত হয়েছে বলেই অনেকে মনে করছে।
এদিকে গ্যান্টজ কেবল কমলা হ্যারিসের সাথেই নয়, তিনি হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জ্যাকজ সুল্যিভান, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলেল মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সমন্বয়কারী ব্রেট ম্যাকগুর্ক, সিনেটের মাইনরিটি নেতা মিচ ম্যাককনেলের সাথেও বৈঠক করেছেন। আজ মঙ্গলবার তার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
গাজা যুদ্ধ নিয়ে বেশ চাপে আছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অনেক ডেমোক্র্যাট ইসরাইল তোষণের জন্য তাকে অভিযুক্ত করে তাকে ভোট না দেয়ার কথা ঘোষণা করছে। ফলে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার পরাজয়ের শঙ্কা দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যায়, ইসরাইলে যদি আজ নির্বাচন হয়, তবে গ্যান্টজ জয়ী হবেন। তিনি অনেক ব্যাপারে মধ্যপন্থী। তবে তিনিও নেতানিয়াহুর মতো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে।
অনেকে মনে করছে, গ্যান্টজ যেকোনো সময় মন্ত্রিসভা থেকে বের হয়ে যাবেন। তখন নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হবেন নেতানিয়াহু। ফলে গ্যান্টজ প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, অক্টোবরে তিন সদস্যের নেতানিয়াহুর যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় গ্যান্টজ যোগ দেয়ার পর থেকেই মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন যে নেতানিয়াহু কিংবা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের চেয়ে গ্যান্টজের সাথেই সহজে আলোচনা করা যায়।
ওয়াশিংটনে আলোচনাকালে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং রাফায় হামলা না চালানোর ব্যাপারে মার্কিন নেতৃত্বের সাথে কোনো কথা গ্যান্টজ বলেছেন কিনা তা জানা যায়নি।