বৃষ্টি নাকি অভিশ্রুতি সুরাহা হবে আদালতে

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত নারী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রী বা বৃষ্টি খাতুনের মরদেহ এখনও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তার নাম জানা যায় বৃষ্টি খাতুন।

অপরদিকে, তিনি তার নাম ব্যবহার করতেন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। নামের এই জটিলতার কারণে তার পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় শনাক্ত করা হবে। পরে নাম-পরিচয় ও মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত। 

ঘটনার পর দেখা যায়, আগুনে পুড়ে মেয়ের নিহতের খবর পেয়ে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন নারী সাংবাদিক বৃষ্টি ওরফে অভিশ্রুতির বাবা শাবলুল আলম সবুজ শেখ। এদিকে, নিহত নারী সাংবাদিকের মরদেহ হাসপাতালে সহকর্মীদের শনাক্ত করা নাম ও বাবা সবুজের দাবি করা নামের মধ্যে মিল পাওয়া যায়নি। এতে বৃষ্টি খাতুন ও অভিশ্রুতি শাস্ত্রী দুটি নামই দুটি ধর্মের হয়ে যায়। মূলত, এই জটিলতা সৃষ্টির কারণেই তার মরদেহ হস্তান্তর করেনি প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শাবলুল আলম সবুজের তিন মেয়ের মধ্যে বড় ছিলেন বৃষ্টি খাতুন। বৃষ্টি ইডেন মহিলা কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একটা সময়ে ইডেন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরে অনলাইন পত্রিকা দ্য রিপোর্টের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এ বছরের ১ মার্চ অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে (নতুন চাকরি) যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। বৃষ্টি খাতুন পারিবারিকভাবে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলেও ঢাকায় এসে নাম পরিবর্তন করে হন অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এবং তার চাকরিক্ষেত্রে অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামে পরিচিত ছিলেন তিনি।

এদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের একটি সূত্র জানায়, মরদেহটিকে রমনা কালি মন্দিরের পুরোহিত অভিশ্রুতির মরদেহের দাবি করেন। তিনি জানান, আট মাস ধরে রমনা কালী মন্দিরে হিন্দু ধর্মের অনুসারী হিসেবে যাতায়াত ও প্রার্থনা করতেন অভিশ্রুতি। এমনকি মন্দিরে নিজেকে সনাতন ধর্মের পরিচয় দিয়ে অভিশ্রুতি জানিয়েছেন তার পারিবার ভারতে বানারাস থাকে।

রমনা থানার একটি সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া থেকে আসা শাবলুল আলম সবুজ শেখ অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর মরদেহ বৃষ্টি খাতুন বলে দাবি করেন এবং মরদেহ নিতে চেয়েছিলেন। এদিকে, নিহত নারী সাংবাদিক অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর শিক্ষা সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে বৃষ্টি খাতুন নাম উল্লেখ রয়েছে।

মরদেহ হস্তান্তরের সময় নিহত নারী সাংবাদিকের নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী এবং তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী বলে হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে দেয় রমনা কালী মন্দির কর্তৃপক্ষ।  

এ বিষয়ে ঢাকার রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা বলেন, মন্দিরের পক্ষ থেকে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং জেলা প্রশাসক বরাবর অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর পরিচয় নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, তার সমাধানে ডিএনএ টেস্টের আবেদন করা হয়েছে। 

পুলিশ বলছে, নিহত নারী সাংবাদিকের নাম ও ধর্মীয় পরিচয়ের জটিলতার কারণে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়নি। মরদেহ হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত জানতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের মর্গ থেকে নিহতের মৃত্যুসনদ তৈরি করা হয়েছে। যেখানে নিহত সাংবাদিকের নাম বৃষ্টি খাতুন উল্লেখ করা হয়েছে। বাবার নাম লেখা হয়েছে সবুজ শেখ। ঠিকানা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা।

এ বিষয়ে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের কিছুই আর করার নেই। আমরা আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বাবা পরিচয়ে কুষ্টিয়ার সবুজ শেখ মরদেহ নিতে চেয়েছেন। এদিকে, রমনা কালী মন্দির কর্তৃপক্ষও মরদেহটি দাবি করেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত এখন আদালতের মাধ্যমে নিতে হবে। কেউ যদি মরদেহ নিতে চায় তাহলে আদালতে আবেদন করতে হবে। এখন আদালত সিদ্ধান্ত দেবে মরদেহ কার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ওই ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আটজন ভর্তি আছেন। বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।