কালের আর্বতে হারিয়ে যাচ্ছে সমতলের ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা। পারিবারিক পর্যায়ে চর্চা না থাকা ও সরকারি পৃষ্টপোষকতার অভাবে তাদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর নেতারা।
নওগাঁসহ সমতলের ১৬ টি জেলায় ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর বসবাসের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর নিজস্ব সংগঠন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের হিসাব মতে সমতলের এ ১৬টি জেলায় ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর ৩৬টি সম্প্রদায়ের প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বসবাস করে।
ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর এ ৩৬টি সম্প্রদায়ের মধ্যে সাঁওতাল, উরাও, মাহাঁলে, সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। এদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিজস্ব ভাষা। এদের মধ্যে সাঁওতালদের নিজস্ব ভাষা অলচিকি, উরাওদের নিজস্ব ভাষা কুড়ুখ ও সাদরী, মাহাঁলে সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষা মাহাঁলি। এসব ভাষার লিখিত কাঠামো না থাকায় মুখে মুখেই যুগ যুগ ধরে এসব ভাষার প্রচলন চলে আসছে। এক সময় এসব সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের নিজস্ব ভাষায় কথা বললেও এখন তারাও বাংলা ভাষায় কথা বলা শুরু করেছেন। এতে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা ১৯৫৭ সালের ৫ জুন ৪০তম অধিবেশনে ১০৭ নং কনভেনশনে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী ও উপজাতীয় ভাষা বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে কিছু নীতিমালা তৈরি করে। এ কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ২১ এ উল্লেখ রয়েছে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সদস্যদের জাতীয় জনগোষ্ঠীর অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সকল স্তরে শিক্ষা অর্জন করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তীতে বাংলাদেশও এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। তবে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫টি ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য তাদের নিজস্ব ভাষায় পাঠ্যপুস্তক ছাপায় জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। তবে সেসব ভাষার শিক্ষক না থাকায় এ পাঠ্যপুস্তক ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী শিশুদের কোন কাজে আসছে না।
আদিবাসী উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক দীপঙ্কর লাকড়া বলেন, আমাদের ভাষার বই সরকার দিলেও তা পাঠদানের জন্য কোন শিক্ষক দেয়নি। আমরা চাই আমাদের নিজস্ব ভাষা টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কারিতাসের আশা প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা মাহালি সম্প্রদায়ের নেতৃ হোসান্না হাসদা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা প্রদান না করায় ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর শিশুরা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। তিনি ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করে এসব ভাষা রক্ষার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় ছাপানো বইগুলো পড়ানোর জন্য সেসব ভাষা জানা কোন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক ড. রতন কুমার বলেন, ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর বৈচিত্রময় ভাষা বাচিয়ে রাখতে হলে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।