পবিত্র রমজান মাসের বাকি এক মাসেরও কম। পবিত্র শবে বরাতের বাকি আর কয়েকটা দিন। রাজধানীর বাজারে এ সময়ে গরুর মাংসের দাম আরেকটু বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহের সংকটের কারণে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে মুরগির দামও চড়া। আর খাসির মাংসের দাম আগে থেকেই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার ও শাহজাহানপুর বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ বিক্রেতা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। কেউ কেউ কেজিতে ৭২০ টাকা রাখছেন। জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেও গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকার মধ্যেই কিনতে পেরেছিলেন ক্রেতারা। সেই হিসাবে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কেজিতে দাম বেড়েছে অন্তত ৫০ টাকা।
গত বছরের শেষের দিকে হঠাৎ গরুর মাংসের দাম কমতে শুরু করে। তখন ঢাকার মাংস ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করেন। তাতে কিছু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন—এমন কথা তুললে ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজিপ্রতি দাম নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকা। ৭ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের দিন পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা গরুর মাংস বিক্রি করেছেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের গতকালের প্রতিবেদনেও বলছে, প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। গত এক মাসের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, গরুর মাংসের দাম গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এ সময়ে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায়।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের শেষ দিকে গরুর দাম কিছুটা কমেছিল। তখন ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম কিছুটা কমিয়ে রাখেন। ক্রেতারাও উৎসাহ নিয়ে মাংস কিনেছিলেন। এখন রোজা ও কোরবানিতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় খামারিরা গরু বিক্রি করতে চাইছেন না। সরবরাহ–সংকটে বাজারে গরুর দাম কিছুটা বেড়েছে। মাংসের দামেও তার প্রভাব পড়েছে।
অন্যান্য মাংসের দাম
বাজারে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। মানভেদে সোনালি মুরগির দাম কোথাও ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তিও চাওয়া হচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, গতবার রোজার আগে ডিম ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছিল একটি চক্র। এবারও তাদের সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। সাধারণ খামারিদের জিম্মি করতে ইতিমধ্যে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে স্বাভাবিকভাবে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
অ্কেএ টানা ৯ বছর বৃদ্ধি পাওয়ার পর দেশে প্রথমবারের মতো মাংসের উৎপাদন কমেছে। আগেরবারের তুলনায় গত অর্থবছর (২০২২-২৩) ৫ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কম মাংস উৎপাদিত হয়েছে। তবে মাংসের উৎপাদন কমলেও গত অর্থবছরে গবাদিপশুর সংখ্যা বেড়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে গবাদিপশু ও পোলট্রির সংখ্যা ছিল ৪৩ কোটি ২৩ লাখ ৭৯ হাজার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ কোটি ২৮ লাখ ৪৭ হাজারে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।