হিজড়াদের পাশে নেই কেউ

হিজড়াদের সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করার উদ্যোগ প্রায় নেই। স্বীকৃতি নিছক কাগজে-কলমে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কেউ তাদের পাশে নেই।

ঢাকার কাছে সাভারের ধামরাই ফেলে কিছু দূর এগোলে ছায়াঢাকা পাখিডাকা সবুজ এক গ্রাম। নাম নৈহাটি। এই গ্রামেরই এক প্রান্তে ঘর তুলেছেন সাবিরুন্নেসা মায়া, ‘মায়া হিজড়ে’। গুরু-মা আর শিষ্য-কন্যাকে নিয়ে বছর কয়েক হয় সংসার পেতেছেন এখানে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর আজ অবধি কেন হিজড়ারা মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় জায়গা পেল না, সেটি খুঁজতেই নৈহাটিতে আসা। গুরু-মা মুন্নির বয়স বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় সমান। মেয়ে মায়া তিরিশের কোঠায়। মায়ার শিষ্য-কন্যা ১৯-২০। সংগত কারণেই নাম উহ্য রাখা হলো।

হিজড়া নেত্রী অনন্যা বণিক খোঁজ দেন এই পরিবারের। অনন্যার জন্ম বণিক পরিবারে। মা-বাবা নাম রেখেছিলেন গৌতম বণিক। ডাকনাম লিটন। হিজড়া জনগোষ্ঠীতে ঠাঁই হওয়ার পর নাম বদলান। নিজের চেষ্টায় স্নাতক হয়েছেন, নাচ শিখেছেন। এখন বিউটি পারলার চালান। হিজড়া নেত্রী হিসেবে পরিচিতিও আছে। পথে যেতে যেতে নিজের অভিজ্ঞতার কথাও বললেন, ‘আমার স্কুলে লিটন ছিল তিনটা। লম্বা লিটন, ভোটকা লিটন আর ছেরি লিটন। ছেলেদের পোশাক পরেও মেয়েদের মতো চলি বলে কত হয়রানি।’

নৈহাটিতে সাবিরুন্নেসার ঘরে গিয়ে উঠি। ছোট ছোট খাঁচায় খরগোশ, ইঁদুর আর ছাগল। উঠানে চরে বেড়াচ্ছে মুরগি। বারান্দায় কোমরে শাড়ি গুঁজে ব্যস্তসমস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছেন একজন। একজন রাঁধছেন। কাটাবাছায় সাহায্য করছেন আরেকজন।

হিজড়া আসলে কারা

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা চূড়ান্ত করে। সেখানে বলা হয়েছে, ক্রোমোজোমের ত্রুটি বা জেনেটিক কারণে যে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নারী বা পুরুষ কোনো শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় না, তারা হিজড়া। এই নীতিমালার আওতায় সমাজে যাঁরা হিজড়া বলে পরিচিত এবং নিজেকে হিজড়া হিসেবে পরিচয় দিতে যিনি অস্বস্তি বোধ করেন না, তিনিই হিজড়া। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে হিজড়ার সংখ্যা সাড়ে ১০ হাজার।

ওই বছরই হিজড়াদের লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ভারতবর্ষের ইতিহাস অবশ্য বলে, স্বতন্ত্র লিঙ্গ হিসেবে হিজড়ারা নারী-পুরুষের মতোই টিকেছিল বহু বছর আগে থেকে। হিজড়ারা বলেন, তাঁরা অন্যান্য লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের চেয়ে আলাদা। কারণ, তাঁদের জীবনপদ্ধতি স্বতন্ত্র।

হিজড়াদের নিয়ে আরও বিশদে কথা হলো জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং অধ্যাপক কাজী রফিকুল আবেদীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভ্রূণের বয়স আট সপ্তাহ হওয়া পর্যন্ত জরায়ুতে নারী-পুরুষ নির্ধারক দুটি সমান্তরাল নালি থাকে। সন্তানটি মেয়ে হলে পুরুষ নির্ধারক নালিটি অপসৃত হয়ে যায়; ছেলে হলে ঘটে উল্টোটা। হিজড়াদের শরীরে দুটি নালিই থেকে যায়। বেশির ভাগ হিজড়ারই ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় থাকে। সেখান থেকে নারীদেহের হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং পুরুষদেহের হরমোন এন্ড্রোজেন নির্গত হয়। তাই একই শরীরে নারী ও পুরুষের প্রত্যঙ্গ বেড়ে অবিকশিত অবস্থায় থেকে যায়।

হিজড়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোনোর পরপরই তাদের শারীরিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে থাকে। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বড় অংশের লেখাপড়ার তখনই ইতি ঘটে।

গুরু-মা মুন্নী, তাঁর শিষ্যা মেয়ে সাবিরুন্নেসা ও সাবিরুন্নেসার শিষ্যা তিনজনই নিজেদের হিজড়া পরিচয় দিয়ে থাকেন। কেউই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। কেন পারেননি সে কথা বলেছেন সবিস্তার।

কেউ চায়নি ওরা লেখাপড়া করুক

মুন্নী, সাবিরুন্নেসা বা তাঁর শিষ্যা বলেন, পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য, স্কুলের বেশির ভাগ সহপাঠী, ক্ষেত্রবিশেষে সহপাঠীদের অভিভাবক, এমনকি শিক্ষকেরাও চাননি হিজড়ারা স্কুলে যাক। কাগজপত্র বলছে, রাষ্ট্রও এই পিছিয়ে পড়া কিশোরদের মূলধারার শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে চায়নি। 

মুন্নী বলেন, ‘সবাই বলছে, তুই আমাদের কেউ না। আমি নিজেও বুঝতাম না, আমি কী ধরনের মানুষ। ছেলেরা টিটকার মারত। কইত, দেখ, মাইয়া গো মতো হাঁটে। হিজড়া বইলা ডাকত। পোলাপান মারত-ধরত। প্যান্ট খুইলা ফালাইত।’

১০-১২ বছর বয়সে মুন্নীর বড় ভাইবোনেরাও নির্যাতনে শামিল হন। সমাজের কথার ভয়ে তাঁরা মুন্নীর স্কুল বন্ধ করে দেন। অভিভাবকদের অভিযোগ ছিল, হিজড়াদের কারণে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মুন্নীর মা জানতেন, তিনি নারী বা পুরুষ নন। তবু কাছছাড়া করতে চাননি। মুন্নী বাসা থেকে বের হবে না, কখনো স্কুলে যাবে না—এসব শর্ত মেনে নেন মা। এখানেই মুন্নীর স্কুলজীবনের সমাপ্তি। একদিন তিনি নিজের মতো মানুষদের খুঁজে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন।

সাবিরুন্নেসা প্রথম বাধা পেয়েছিলেন পরিবার থেকে। পরে যুক্ত হয় অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা।

সাবিরুন্নেসা বলেন, ‘আব্বা ট্রাক চালাইত। মাঝেমধ্যে রাতে বাড়ি আইসা ভালোমন্দ খাইয়াইত। মাঝেমধ্যে মাইরা ফাটাইয়া ফেলত। বুঝতাম না, আব্বা কেন এমন করে, কেন স্কুলে দিতে চায় না।’

সাবিরুন্নেসা স্কুলে যেতেন ছাত্রদের পোশাকে, মিশতে চাইতেন ছাত্রীদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখলে ছাত্ররা অশ্লীল ভাষায় ডাকাডাকি করত। অভিভাবকেরাও চাইতেন না, তাঁদের সন্তানেরা এ রকম কারও সঙ্গে মিশুক। তবে নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি স্কুলের শিক্ষকেরা তাঁকে আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে শেষ পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণিতে স্কুল ছাড়েন।

সাবিরুন্নেসার শিষ্য-কন্যার নামের আদ্যক্ষর ‘ন’। প্রথম আলোকে বলেন, তিনি স্কুল ছাড়েন প্রধান শিক্ষকের যৌন হয়রানির কারণে। তিনি বলেন, ‘সব বাচ্চাকে ছুটি দিয়ে স্যার একদিন আমাকে থাকতে বললেন। অনেক প্রশ্ন করলেন। কয়েক দিন পরই তিনি আমাকে ধর্ষণ করলেন। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারলাম না।’

‘ন’ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। শিক্ষক বাসায় এসে বসে থাকেন। মায়ের সামনে বোঝান। আড়ালে বলেন, সবাইকে সব বলে দেবেন। কোনো স্কুলই তাঁকে আর নেবে না। বাধ্য হয়ে স্কুলে ফিরে যান ‘ন’। এবার স্কুলের শৌচাগারে ধর্ষণের শিকার হন। স্কুলের এক শিক্ষিকাকে বিষয়টি জানান। এরপরও উপর্যুপরি নির্যাতনে ‘ন’ তত দিনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি যে ছেলে বা মেয়ে নন, এই ‘অপরাধে’ মাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন বাবা। এবার তিনিও মাকে ছেড়ে হিজড়াদের দলে ভিড়লেন। মায়ের জন্য সারা রাত কাঁদতেন। এখনো কাঁদেন। সুযোগ পেলে আবার লেখাপড়া করতে চান। চান নতুন জীবন।

তিন প্রজন্মের এই তিন হিজড়াই মনে করেন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে মেনে নিতে হবে, নারী-পুরুষের বাইরেও মানুষের অন্য লৈঙ্গিক পরিচয় আছে। হিজড়া শিশু জন্মাতেই পারে। নইলে কখনো তারা লেখাপড়া করতে পারবে না।

শিক্ষা কমিশনগুলো যা বলেছে

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত চারটি শিক্ষা কমিশন, একটি কমিটি এবং একটি শিক্ষানীতি হয়েছে। ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন সমাজতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে সব শিশুর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির কথা বলেছিল।

মফিজউদ্দীন শিক্ষা কমিশন আরেকটু এগিয়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল। পরের এম এ বারী কমিশন এবং মনিরুজ্জামান মিঞা কমিশনও আগের মতোই সর্বজনীন শিক্ষার ওপর জোর দেয়। ২০১০ সালের শেষ শিক্ষানীতিটিতে সব ধরনের প্রতিবন্ধী, পথশিশু, আর্থসামাজিকভাবে বঞ্চিত, অতিবঞ্চিত শিশু এবং তুলনামূলতভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোতে শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থার কথা বলা হয়।

তবে কোনো কমিশন, কমিটি বা নীতিতে হিজড়া শিশু-কিশোরদের নিয়ে আলাদা কিছু নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশু-কিশোরেরা যেন শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝরে না পড়ে, সেদিকে তাঁরা নজর রেখেছেন। হিজড়ারা ঝরে পড়ছে কি না, পড়লে তাদের আবারও মূলধারায় ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।

সে হিসেবে নতুন শিক্ষাক্রমেই প্রথমবারের মতো লৈঙ্গিক ভিন্নতার প্রসঙ্গ এসেছে। শিক্ষাক্রম তৈরির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, সব শিশুর কথা মাথায় রেখেই তাঁরা নতুন শিক্ষাক্রম তৈরি করেছেন।

তারিক আহসান বলেন, ‘প্রত্যেক শিশুর বৈচিত্র্যকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিকাশের চিন্তা থেকে শিক্ষাক্রমটি তৈরি হয়েছে। শিশুরা তাদের শিখন অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারবে যে আমরা সবাই আলাদা। আমাদের মধ্যে মিল-অমিল দুই-ই আছে। দুটোকে কাজে লাগালেই সমৃদ্ধি আসবে।’

ভাতার সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না হিজড়ারা

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া হিজড়া শিক্ষার্থীদের ভাতা দিচ্ছে সরকার। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জনপ্রতি মাসে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিকে ৮০০ টাকা এবং উচ্চমাধ্যমিকে ১ হাজার টাকা করে পান। এই ভাতা পাচ্ছেন বর্তমানে ১ হাজার ২২৫ জন।

উন্নয়নকর্মী ও লিঙ্গ রূপান্তরিত নারী জয়া শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, দুটি কারণে বেশির ভাগ হিজড়া শিশু-কিশোর ভাতার সুবিধা পাচ্ছে না। প্রথমত, বাবা-মায়েরা সন্তানের হিজড়া পরিচয় লুকিয়ে রাখেন। তাই ভাতা নেন না। দ্বিতীয়ত, পরিবারে নানা বাধার শিকার হয়ে তারা বাড়ি ছেড়ে গুরু-মায়ের ডেরায় গিয়ে ওঠে। সেখানে খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতে হয় নিজেদের। তখন অর্থের জন্য বাজারে বাজারে ঘোরে। স্কুলে যাওয়ার সুযোগ হয় না।

অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর পরিবারের সন্তান এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পারিবারিক সমর্থন থাকলেও কোন স্কুল ইউনিফর্ম পরবে, তা নিয়ে পরিবারগুলো দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকে। স্কুলে ছেলে বা মেয়েদের শৌচাগার ব্যবহার নিয়েও সমস্যা থাকে।’

দেশে ৪০টির বেশি মাদ্রাসায় কোরআন শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুর রহমান আজাদ। তিনি বলেন, হিজড়ারা নিজেদের মতোই মাদ্রাসায় আসার সুযোগ পায়। এ নিয়ে তিনি কড়াকড়ির পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থা যত নমনীয় হবে, হিজড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ততই মঙ্গল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাব্যবস্থায় হিজড়াদের অন্তর্ভুক্ত করতে কোটাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে নেতৃস্থানীয় দুজন হিজড়া বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে শিশু-কিশোরদের ধরে রাখতে না পারলে এসব সুযোগ কাজে আসবে না।

এমন হওয়ার কথা ছিল না

ইতিহাস বলে, ভারতবর্ষে নারী-পুরুষের মতো হিজড়ারাও স্বতন্ত্র লিঙ্গ হিসেবে টিকে ছিল। দেবরাজ ইন্দ্রর সভায় উর্বশী প্রেম নিবেদন করেছিলেন অর্জুনকে। প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় উর্বশীর শাপে অর্জুন তৃতীয় লিঙ্গে পরিণত হন। শরীরে চড়ান নারীদের পোশাক। রাজা বিরাটের কন্যাকে নাচ-গান শেখানোর দায়িত্ব নেন।

হার্ভার্ড ডিভিনিটি স্কুলে ভারতবর্ষের থার্ড জেন্ডার ও হিজড়াদের নিয়ে গবেষণায় রামায়ণ-মহাভারতের উল্লেখ আছে। ১৫ থেকে ১৯ শতকে মুসলিম শাসকদের সময়েও হিজড়াদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা আছে। শিশুদের জন্ম ও বিয়ের সময় তাদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রথা ছিল। সমস্যার শুরু ১৮৭১ সালে। ব্রিটিশ শাসকেরা আইন করে হিজড়াদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করল, দেখামাত্র গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পর আইনটি বাতিল হয়। কিন্তু হিজড়ারা আর মূলস্রোতে ফিরে আসতে পারেনি। এখন তারা সমাজের চোখে ‘উপদ্রব’।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড সোশিওলজি বিভাগের শিক্ষক হেলাল মহিউদ্দীন বলেন, হিজড়া শিশু-কিশোরদের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় আত্মস্থ করতে হলে প্রথমেই তাদের অপরকরণের (যেন তারা মানুষ নয়) ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। শিশুদের চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণিতেই ধারণা দিতে হবে, নারী-পুরুষের বাইরেও অন্য লিঙ্গের মানুষ আছেন। তাহলে তারা হিজড়া শিশুদের দিকে সমানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে। তৃতীয় লিঙ্গ যে প্রতিবন্ধিতা নয়, তারও প্রচার দরকার।