একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী আগস্টের শেষ সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তিনি মেসেঞ্জারে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। যিনি হয়রানি করেছেন, তিনি ওই ছাত্রীর সাবেক শিক্ষক। ছাত্রী বিষয়টি অন্যদের কাছে প্রকাশ করে দেবেন জানালে শিক্ষক অশ্লীল ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবেন বলে শাসান। বগুড়ার বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজের ওই শিক্ষকের (এখন সাময়িক বরখাস্ত) ফোনালাপের অডিও ও অশালীন প্রস্তাবের স্ক্রিনশটও ফেসবুকে স্ট্যাটাসের সঙ্গে যুক্ত করেন ওই ছাত্রী।
প্রযুক্তির প্রসারের এ যুগে ইন্টারনেট ছাড়া দুনিয়া চলে না। করোনাকালে শিক্ষা কার্যক্রম, অফিস, কেনাকাটা অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে আরও বেশি। একই সঙ্গে বেড়েছে হয়রানিও। এ ক্ষেত্রে বয়স, শ্রেণি, পেশা, লিঙ্গ ভেদাভেদ না থাকলেও সবচেয়ে বেশি হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে নারী ।
অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার মাত্রা বুঝতে প্রথম আলো ও বেসরকারি সংগঠন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে উঠে এসেছে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭৯ শতাংশের বেশি কখনো না কখনো অনলাইনে হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে নারী প্রায় ৫৩ শতাংশ। এই নারীদের বেশির ভাগ আপত্তিকর ও অপমানজনক মন্তব্যের শিকার হন।
প্রথম আলোর ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জরিপটি চালানো হয়। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অংশগ্রহণকারীরা। ওয়েবসাইটে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫৫ জন এবং ফেসবুকে ৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮ জনের কাছে পৌঁছায় জরিপটি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সব কটি (নয়টি) প্রশ্নের জবাব দেন ২৩৩ জন। যাঁরা সব কটি প্রশ্নের জবাব দেননি, তাঁদের মত গ্রহণ করা হয়নি। যাঁদের জবাব গ্রহণ করা হয়েছে, তাঁদের ৬৩ শতাংশ নারী ও ৩৭ শতাংশ পুরুষ। তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী ১১ শতাংশের বেশি। ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ২৭ শতাংশ ও ২৫ বছরের ওপরের বয়সী ৬১ শতাংশের বেশি। অল্পসংখ্যক ১৫ বছরের কম বয়সীও অংশ নেয়।
আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার ৪৫% নারী
মেডিকেল কলেজের ওই ছাত্রীর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ। তিনি ২০ নভেম্বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকের বিরুদ্ধে মেয়েটির দেওয়া তথ্য যাচাই করে সত্যতা পেয়েছি। মেসেঞ্জারে যেসব বার্তা পাঠানো হয়েছে, তা অশালীন। একজন শিক্ষক হয়ে এমন বার্তা কীভাবে পাঠান বুঝতে পারি না। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে ওই শিক্ষককে চূড়ান্ত বরখাস্তের সুপারিশ করা হয়েছে।’
প্রথম আলো–প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের জরিপ অনুসারে, ডিজিটাল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ও অপমানজনক মন্তব্যের মাধ্যমে ৭১ শতাংশ হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হন ব্যবহারকারীরা। তাঁদের মধ্যে নারী ৪৫ শতাংশের বেশি।