বিশ্বে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। নারী ক্ষমতায়নের রূপকার হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্বব্যাপী সম্মানিত। তার জন্ম মাস সেপ্টেম্বরে হারনেট নিউজ “WOMEN LEADS, Inspiration HPM” নামক কলামের মাধ্যমে এমন সব নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চায় যারা এই অভূতপূর্ব ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতিতে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করে চলছে । তার ধারাবাহিকতায় HerNet News এর ” ইন্টারভিউতে আজকের অতিথি সমাজ কল্যানে তরুণ নারী- মালিয়া হোসেন ও ফারিন দৌলা
জীবনটাকে কেমনভাবে দেখেন ?
মালিয়া: এমন প্রশ্নের উত্তরে মালিয়া ইমাম খুব চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেন জীবনটাকে সেভাবেই দেখি যেভাবে আমি দেখতে চেয়েছিলাম। জীবন কতটুকু অর্থবহ হবে কিংবা অর্থহীন হবে, কতটা রঙ্গিন হবে বা সাদাকালো হবে সেটা নির্ভর করবে ব্যাক্তির ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টার উপর।

ফারিন: অন্যদিকে ফারিন দৌলাহ বলছিলেন অনেক দুশ্চিন্তা,অনিশ্চয়তা,হাসি -আনন্দ মিলিয়েই জীবন। তবে আমার কাছে মনে হয় ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে জীবনটাকে সে কেমন ভাবে দেখছে। ইতিবাচকতা নিয়ে বাচঁতে হবে। আশেপাশের সবাইকেও এই বার্তাটাই হারনেটের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে চাই।

লকডাউনে সময় কিভাবে কাটছে ?
সমাজ পরিবর্তনে এবার হাল ধরেছেন তরুন মালিয়া ইমাম এবং ফারিন দৌলাহ।
“Hernet এর পাতায় এবারে উঠে এলো সদা হাসোজ্জোল দুই মুখের অজানা সব গল্প। যারা প্রথমত একজন সফল মা এবং সমানতালে সামলাচ্ছেন কর্মস্থলও। ঘরবন্দি অবস্থায় কেমন কাটছে তাদের সময় এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে দুই সফল উদ্যোক্তা হারনেটকে জানান, সামাজিক মাধ্যমগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে অধিক সময় দেয়ায় অনেক আপনজনের সাথে যোগাযোগটা বেড়েছে,যেটা নিত্যকার কর্মব্যস্ততায় হয়ে ওঠেনি।
ফারিন: তেমনিভাবে চারিদিকে সংকটাপন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দীর্ঘ সময় ঘরবন্দি থাকায়। এছাড়াও Conflict,Domestic Violence এবং এর ফলে Divorce rate টা বেড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বেশ প্রভাব ফেলছে এই পরিস্থিতি এমনটাই বলছিলেন “One Circle”এর প্রতিষ্ঠাতা ফারিন দৌলাহ।

মালিয়া: অপরদিকে মালিয়া হোসেন জানান সন্তানদের নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।সাথে কাজের দিকেও নজর তো রাখতে হচ্ছেই। ভালো খারাপ সবটা মিলিয়েই কাটছে দুই Changemaker এর করোনাকালীন সময়

সংসারজীবন আর কর্মজীবন দুটোর ভারসাম্যটা কিভাবে বজায় রাখছেন ?
ফারিন: গল্পের এ পর্যায়ে ফারিন দৌলাহ অনেকটা অভিযোগ এর স্বরেই বলছিলেন,ভারসাম্য বজায় রাখার দ্বায়ীত্বটা ঐতিহ্যগতভাবে নারীই পালন করে এসেছে।আমার পূর্ববর্তী প্রজন্মকেও করতে হয়েছে আমাকেও করতে হচ্ছে তবে আমার পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রে যাতে এই পরিবর্তনটা আনতে পারি সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। এই বক্তব্যের জোড়ালো কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন দ্বায়িত্বের জায়গাটা লিঙ্গবিশেষে নয় বরং ব্যাক্তি হিসেবে কাঁধে নেয়ার প্রবণতাটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নারী কর্মজীবন এবং ব্যাক্তিজীবন উভয় ক্ষেত্রেই সমানতালে শ্রম দিয়ে যাবে কোনো সহায়তা,সমর্থন প্রত্যক্ষভাবে থাকবেনা এটি একটি উন্নত সমাজের কাম্য হতে পারেনা।কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে উভয় পক্ষেরই পূর্ণ সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব থাকাটা জরুরি। শিক্ষাটা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।

মালিয়া: এরই প্রসঙ্গক্রমে একই স্রোতধারার আরেকজন অতিথি মালিয়া হোসেন বলছিলেন ভারসাম্য বা সমতা রক্ষার বিষয়টা তখনই একজন নারী সফলভাবে এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে করতে সক্ষম হবেন যখন তিনি দ্বায়িত্বের জায়গাটা ভাগ করে নিতে পারছেন। এভাবেই দুই শ্রেয়সী তাদের অনুযোগ এবং আহ্বান গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।
পেশাগতভাবে যেসব সংস্থার সাথে সম্পৃক্ততা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাই ।
মালিয়া: “ইমাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি ” তে ডিরেক্টর হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন মালিয়া হোসেন। এছাড়া কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজ কিন্ডারল্যান্ড নিয়ে। “আমরা রমনীর” কো-ফাউন্ডার হিসেবে দ্বায়িত্বরত রয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল অব ডব্লিউআইসিসিআই এও সদস্য হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন।
ফারিন: এদিকে ফারিন দৌলাহ “ওয়ান সার্কেল” এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে যাত্রা শুরু করেছেন। সমাজ পরিবর্তনে কাজ করছেন ইয়ুথদের নিয়ে। নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা অনুষদে ফ্যাকাল্টি হিসেবে নিয়োজিত রয়েছি। সামনে চুক্তিবদ্ধ হতে যাচ্ছি “বিজিএমইএ” এর সাথে। এককথায় দুজনই সফলতার সাথে করে যাচ্ছেন প্রতিনিধিত্ব।

নারী হয়েও কিভাবে প্রতিকূলতাকে জয় করে এগিয়ে এসেছেন ?
ফারিন: অদৃশ্য প্রতিকূলতার সাথে প্রতিনিয়তই লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে আমার সমাজে এই বক্তব্যেই শুরু করেন ফারিন দৌলাহ। যে সমাজে ইভটিজিং, সাইবার বুলিং ডালভাত এবং নিত্যকার ঘটনা সেখানে বৈষম্য আর প্রতিকূলতা নারীর চিরসঙ্গী। এগুলোর সম্মুখীন হওয়ার সাথে কমবেশি প্রতিটা নারীই পরিচিত। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় এগিয়ে যেতে সবাই বলে, কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধাঁ হয়ে দাঁড়াবার মানুষের অভাব হয় না। এটি একটি বিশাল প্রতিকূলতা। নিজের আত্নবিশ্বাস,উদ্যমে এবং আপনজনের সর্মথনেই প্রতিকূলতাগুলোকে জয় করতে পেরেছি।

মালিয়া: মালিয়া হোসেন নিজেকে বেশ ভাগ্যবান হিসেবে সংগায়িত করেছেন। তেমন কোন প্রতিকূলতায় তাকে পরতে হয়নি।বরং নারী হওয়ায় সহযোগিতার হাতগুলোই বেশি পেয়েছেন। অধিকাংশ কাজ করেছেন পারিবারিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে।তিনি আরও বলছিলেন আমি এর শিকার না হলেও সমাজের অন্য নারীদের বৈষম্য এবং প্রতিকূলতার জায়গাটা বেশ চোখে পড়ার মতই বলে দাবি করেছেন।

সমাজের জন্য কাজ করছেন।বাংলাদেশ কে কোন জায়গায় দেখতে চান ?
মালিয়া: অসাধারণ এক বিষয় তুলে ধরলেন মালিয়া হোসেন। বলছিলেন স্বাধীনতার কথা আর্থিক স্বাধীনতাই কেবল নয় স্বাধীনচেতা মনোভাব সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছি। চিন্তার স্বাধীনতা থাকতে হবে তবেই আসবে প্রকৃত পরিবর্তন। ফারিন: একই প্রশ্নের উত্তরে ফারিন দৌলাহ তার ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করে বলেছিলেন বাংলাদেশকে সেই পর্যায় দেখতে চাই যেখানে ভেদাভেদ আর শ্রেণিবৈষম্যের জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হবে না।বাংলাদেশের পরিবর্তন হবে অনুকরনীয় উদাহরণ।
হারনেট কে নিয়ে কি বলতে চান ?
সমাজের গেড়াঁকলে চাপা পড়ে যাওয়া কিছু বিষয় যেমন অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গ গোষ্ঠী, পারিবারিক নির্যাতন,শিশু অধিকারসহ ছিটকে পড়া অসংখ্য বিষয়গুলোকে তুলে ধরার কাজটি করবে হারনেট এমনটাই আশা। পাশাপাশি কাজ করছে বয়োজ্যেষ্ঠদের নিয়ে। অসাধারন এবং সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। সমাজের পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নের দিকে আলোকপাত করতে হলে মাইনরিটি টাকেও প্রাধান্য দিতে হবে।
হারনেটের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান সম্পর্কে আপনার অভিমত ।
মালিয়া হোসেন ও ফারিন দৌলা: মহিলা ক্ষমতায়নের এই স্মরণীয় টিভিটির মশাল বহনকারী হিসাবে আলিশা এক বিস্ময়কর কাজ করেছে । যেমন যুব ও প্রবীণদের একসাথে কাজ করার জন্য সংযুক্ত করে। তার সম্পর্কে যেটা ভালবাসি তা হল তিনি পুরুষদেরকে যেভাবে সর্বশ্রেণীর নারী কল্যানের জন্য সংযুক্ত করছে , তার নেতৃত্বে হারনেট লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা করতে অতুলনীয় ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশে এটাই প্রত্যাশা এবং আমি ,ফারিন আমরা সকলেই তার সাথে আছি ।
