সিরাজগঞ্জের তাড়াশে এক মাদ্রাসাছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলেও তার প্রেমিক ওই অনাগত সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকার করছেন না। এর ফলে ওই অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত ও পিতৃপরিচয় কী হবে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ওই কিশোরী ও তার হতো দরিদ্র পরিবার।
জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নে। ওই কিশোরীর সঙ্গে স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র জুবায়ের আহমেদের (১৭) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় গোপনে কালেমা পড়ে বিয়ে করেন বলে দাবি করেন ওই মাদ্রাসাছাত্রী। তার দাবি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় তারা কাবিন তথা বিয়ে রেজিস্ট্রে করতে পারেনি।
পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করার পর শারীরিক সম্পর্কের পর গর্ভে সন্তান আসলে উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয়। ঘটনাটি প্রকাশ হলে জুবায়ের আহমেদের বাবা ফোরকান আলী বিষয়টি ধামাচাপ দেওয়ার চেষ্টা করে। কাবিন না থাকায় তারা সন্তান নষ্ট করার জন্য বারবার চাপ দিলেও ওই কিশোরী তাতে রাজি হয়নি।
জুবায়েরের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় নিরুপায় ওই কিশোরীর বাবা সমাজে বিচার চেয়েও বিচার না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা।
অপরদিকে ‘অসতী’ আখ্যা দিয়ে জুবায়েরের পরিবারের প্রভাবে গ্রামের মাতবররা ওই মাদ্রাসাছাত্রীর পরিবারকে ‘একঘরে’ করে রেখেছে। তাদের সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি কোরবানির মাংসও তাদের দেওয়া হয়নি-এমন অভিয়োগ পাওয়া গেছে। এর ফলে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে কিশোরীর পরিবার। বর্তমানে নয় মাসের সন্তান গর্ভে নিয়ে ওই কিশোরী দুশ্চিন্তায় অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছে।
ভুক্তভোগী কিশোরীর ভাষ্যমতে, ‘আমার গর্ভে সন্তানের জন্য আমি আত্মহত্যাও করতে পারছি না। তা না হলে এতদিন কবে আত্মহত্যা করতাম।’
এদিকে, অভিযুক্ত জুবায়ের আহম্মেদ পলাতক থাকায় অনেক চেষ্টার পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জুবায়েরের বাবা ফোরকান আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘যে মামলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ফাঁসানোর জন্য আমাদের জড়ানো হয়েছে। আদালতে মামলা হয়েছে, আদালতেই মোকাবিলা করব।’
এ বিষয়ে বারুহাস ইউপি চেয়ারম্যান মোক্তার হোসেন মুক্তা বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি সবেমাত্র জেনেছি। তবে ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক বটে। আমি চাই অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাড়াশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ হোসেন বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’